একই জাতীয় দুটি ভেক্টর রাশিকে যোগ বা বিয়োগ করা যায়। যেমন সরণের সাথে কেবল সরণই যোগ বা বিয়োগ করা চলে। সরণের সাথে বেগের যোগ বা বিয়োগের প্রশ্নই ওঠে না।
যেমন ধরা যাক, একটি নৌকায় দাঁড়ের বেগ ঘণ্টায় 8 কিলোমিটার এবং একটি নদীর পানির স্রোতের বেগ ঘণ্টায় 6 কিলোমিটার। নৌকাটিকে ঐ নদীর এক পাড় হতে সোজা অপর পাড়ের দিকে চালালে, নৌকাটির উপর যে দুটি বেগ ক্রিয়া করবে এদের যোগফল (8 + 6) = 14 কিলোমিটার / ঘণ্টা দ্বারা নৌকাটির প্রকৃত বেগ পাওয়া যাবে না—প্রকৃত বেগ সম্পূর্ণ আলাদা হবে। আবার নৌকাটির গতিমুখ ঐ দুই বেগের মাঝামাঝি কোন এক দিকে হবে। এই কারণে ভেক্টর রাশির যোগ-বিয়োগ জ্যামিতিক পদ্ধতি অনুসারে করতে হয়।
একই অভিমুখী দুটি ভেক্টর রাশি যোগ করতে হলে রাশি দুটিকে একই দিকে নির্দেশ করতে হয়, আর বিয়োগ করতে হলে একটি ভেক্টর রাশিকে অপরটির বিপরীত দিকে নির্দেশ করতে হয়। কিন্তু দুই বা ততোধিক ভেক্টর রাশি একটি বিন্দুতে ক্রিয়া করলে এদের যোগফল আর একটি নতুন ভেক্টর রাশি হবে। দুই বা ততোধিক ভেক্টর রাশি যোগে যে একটি নতুন ভেক্টর রাশি হয় তাকে এদের লবি ( Resultant) বলে। অর্থাৎ লব্ধি হল ভেক্টর রাশিগুলোর সম্মিলিত ফল।
জ্যামিতিক পদ্ধতিতে ভেক্টর রাশির যোগ নিম্নলিখিত পাঁচটি সূত্রের সাহায্যে করা যায়; যথা-
(১) সাধারণ সূত্র (General law)
(২) ত্রিভুজ সূত্র (Law of triangle )
(৩) বহুভুজ সূত্র (Law of polygon )
(৪) সামান্তরিক সূত্র (Law of parallelogram) এবং
(৫) উপাংশ সূত্র (Law of components)
এই অনুচ্ছেদে প্রথম চারটি সূত্র আলোচনা করা হল :
সূত্র : সমজাতীয় দুটি ভেক্টরের প্রথমটির শীর্ষ বা শেষবিন্দু এবং দ্বিতীয়টির আদি বিন্দু একই বিন্দুতে স্থাপন করে প্রথম ভেক্টরের আদি বিন্দু ও দ্বিতীয় ভেক্টরের শীর্ষবিন্দুর মধ্যে সংযোগকারী সরলরেখার দিকে লব্ধি ভেক্টরের দিক এবং ঐ সরলরেখার দৈর্ঘ্য ভেক্টর দুটির লব্ধির মান নির্দেশ করবে।
ধরা যাক একই বিন্দুতে একই সময়ে ক্রিয়াশীল দুটি ভেক্টর রাশি ও -এর লব্ধি নির্ণয় করতে হবে।
নির্দেশী সরলরেখা AB-এর শীর্ষবিন্দু B তে নির্দেশী সরলরেখার আদিবিন্দু থাকে। এরূপে BC রেখা দ্বারা নির্দেশ করে -এর আদিবিন্দু A এবং -এর শীর্ষবিন্দু C যুক্ত করি এবং রেখাটিকে A হতে C অভিমুখে তীর চিহ্নিত করি [চিত্র ১১২]। তা হলে তীর চিহ্নিত AC রেখাই নির্দেশ করবে। এখানে রাশি দুটির যোগফল নিম্ন উপায়ে লেখা হয় —
= + (1)
অনুরূপে দুই বা ততোধিক ভেক্টর রাশি যোগ করা যায়।
১.১৩ চিত্রে তিনটি ভেক্টর রাশি , ও যথাক্রমে তীর চিহ্নিত OA, AB ও BC সরলরেখায় নির্দেশ করে OC সরলরেখা দ্বারা এদের লব্ধি সূচিত হয়েছে।
এখানে লব্ধি, = + +
ব্যাখ্যা ঃ মনে করি ও দুটি ভেক্টর যোগ করতে হবে। প্রথমে -এর প্রান্ত বা শীর্ষবিন্দুর সাথে -এর আদি বিন্দু যুক্ত করে ভেক্টর দুটি মানে ও দিকে বাহু AB ও BC দ্বারা সূচিত করা হল। এখন -এর আদি বিন্দু ও -এর শেষ বিন্দু যোগ করে ABC ত্রিভুজটি সম্পূর্ণ করা হল। AC বাহুটিই দিকে ও মানে ও -এর লব্ধি ভেক্টর নির্দেশ করে [চিত্র ১.১৪]।
অর্থাৎ,
বা, + =
পুনঃ,
বা,
ব্যাখ্যা ঃ মনে করি, পাঁচটি ভেক্টর রাশি [চিত্র ১.১৫। এদের লব্ধি নির্ণয় করতে হবে। এখন প্রথম ভেক্টর রাশির শীর্ষবিন্দুর উপর দ্বিতীয় ভেক্টর রাশির পাদবিন্দু, দ্বিতীয় ভেক্টর রাশির শীর্ষবিন্দুর উপর তৃতীয় ভেক্টর রাশির পাদবিন্দু স্থাপন করি এবং এমনিভাবে ভেক্টর রাশিগুলোকে পর পর স্থাপন করি। তাহলে বহুভুজ সূত্রানুসারে প্রথম ভেক্টর রাশির আদি বিন্দু এবং শেষ ভেক্টর রাশির শীর্ষবিন্দুর সংযোজক ভেক্টর রাশি -ই উল্লিখিত ভেক্টর রাশিগুলোর লব্ধির মান ও দিক নির্দেশ করবে।
লব্ধি,
মনে করি O বিন্দুতে একটি কণার উপর ও ই দুটি ভেক্টর রাশি একই সময়ে কোণে ক্রিয়া করছে [চিত্র ১.১৬। OA ও OC-কে সন্নিহিত বাহু ধরে OABC সামন্তরিকটি অংকন করি এবং OB যুক্ত করি। এই সূত্রানুসারে উভয় ভেক্টরের ক্রিয়াবিদু O থেকে অংকিত কৰ্ণ -ই ভেক্টর P ও Q-এর লব্ধি R নির্দেশ করে।
বা, + =
মনে করি লব্ধির মান R এবং কোণটি সূক্ষ্মকোণ। এখন B বিন্দু হতে OA-এর বর্ধিত অংশের উপর BN টানি যা বর্ধিত OA বাহুকে N বিন্দুতে ছেদ করল।
AB ও OC সমান্তরাল।
OB2 = ON2 + BN2 = (OA + AN)2 + BN2 = OA2 + 20A.AN + AN2 + BN2 আবার, BNA সমকোণী ত্রিভুজে, AB2 = AN2 + BN2 বা, OC2 = AN2 + BN2 [ AB = OC ] এখন ত্রিকোণমিতির সাহায্যে আমরা পাই, cos AN = AB cos = OC cos সুতরাং OB2 = OA2 + AB2 + 20A.AB cos বা, OB2 = OA2 + OC2 + 2OA. OC cos বা, R2 = P2 + Q2 + 2PQ cos (4) মনে করি P-এর সাথে কোণ উৎপন্ন করে লব্ধি R ক্রিয়া করছে। সুতরাং OBN সমকোণী ত্রিভুজে, (5) BAN সমকোণী ত্রিভুজে, সমীকরণ (4) এবং সমীকরণ (5) হতে যথাক্রমে R এবং পাওয়া যায়। সুতরাং, দুটি ভেক্টর একই দিকে ক্রিয়াশীল হলে এদের লন্ধির মান হবে ভেক্টরদ্বয়ের যোগফল এবং দিক হবে ভেক্টরদ্বয় যেদিকে ক্রিয়া করে সেদিকে। মনে করি দুটি ভেক্টর রাশি এবং একই সময়ে কোন বিন্দুতে কোণে ক্রিয়া করছে। ভেক্টর যোগের সামান্তরিক সূত্রানুসারে এদের লব্ধির মান (ক) উপরোক্ত সমীকরণ হতে বলা যায় লব্ধি -এর মান এবং -এর মধ্যবর্তী কোণের উপর নির্ভর করে। -এর মান সর্বাধিক হবে যখন cos C-এর মান সর্বাধিক হবে অর্থাৎ cos = 1 = cos 0° বা, = 0° হবে। লব্ধির সর্বোচ্চ মান অন্যভাবে বলা যায়, দুটি ভেক্টর রাশির লন্ধির মান এদের যোগফল অপেক্ষা বড় হতে পারে না । (খ) লব্ধি R-এর সর্বনিম্ন মান হবে যখন cos -এর মান সর্বনিম্ন হবে অর্থাৎ cos =- 1 = cos 180° বা, = 180° হবে। অতএব, দুটি ভেক্টর রাশি যখন একই সরলরেখা বরাবর পরস্পর বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে তখন তাদের লঙ্ঘির মান সর্বনিম্ন হবে এবং লক্ষির সর্বনিম্ন মান ভেক্টর রাশি দুটির বিয়োগফলের সমান হবে। সুতরাং বলা যায়, দুটি ভেক্টর রাশির সর্বনিম্ন মান এদের বিয়োগফল অপেক্ষা ছোট হতে পারে না। এখানে উল্লেখ্য যে (7) নং সমীকরণে ~ চিহ্নটি P এবং Q-এর মধ্যে বিয়োগফল নির্দেশ করে, তবে P এবং Q এদের মধ্যে যেটি বড় সেটি আগে লিখতে হবে অর্থাৎ Q যদি P অপেক্ষা বড় হয় তবে P Q =QP দুটি ভেক্টর রাশির বিয়োগ বলতে একটি ভেক্টরের সাথে অপরটির ঋণাত্মক ভেক্টরের যোগফল বুঝায়। -> , হলো ভেক্টর দুটির বিয়োগফল হলে দেখা যায়, = - = + (- ) ভেক্টর যোগের ত্রিভুজ সূত্র, সামান্তরিক সূত্র ও বহুভুজ সূত্র প্রভৃতি ভেক্টরের বিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ধরা যাক ও ভেক্টর দুটির বিয়োগফল নির্ণয় করতে হবে। প্রথমে ভেক্টর দুটিকে মান ও দিকে অপরিবর্তিত রেখে একই আদি বিন্দু হতে OA ও OB অঙ্কন করতে হয় [চিত্র ১:১৭]। এরপর -এর প্রান্ত বিন্দু B-এর সাথে -এর প্রান্ত বিন্দু A যোগ করলে -ই মানে ও দিকে – ভেক্টরকে সূচিত করে। অতএব, = - ধরা যাক ও দুটি ভেক্টর। ও ভেক্টর দুটিকে একই আদি বিন্দু হতে উপযুক্ত বাহু দ্বারা সূচিত করতে হয়[চিত্র ১:১৮]। এরপর -এর সমান অথচ বিপরীতমুখী বাহু দ্বারা - -কে নির্দেশ করা হয়। এখন OA ও OC-কে সন্নিহিত বাহু ধরে OADC সামান্তরিক অঙ্কন করলে কর্ণ উক্ত ভেক্টর দুটির বিয়োগফল নির্দেশ করে । অর্থাৎ, কর্ণ = + = + (- ) = - । + = + প্রমাণ : মনে করি, ও দুটি ভেক্টর রাশি এবং R রাশি দুটির লব্ধি [ চিত্র ১:১৯ ]। ত্রিভুজ সূত্র অনুসারে, OAB ত্রিভুজে = + অর্থাৎ = + এখন OABC সামান্তরিক অঙ্কন করি এবং OC ও CB-এ যথাক্রমে AB ও OA এর ন্যায় তীর চিহ্নিত করি। OCB ত্রিভুজে = + (ত্রিভুজ সূত্র অনুসারে), 'অর্থাৎ + = + এটিই হল বিনিময় সূত্র । তেমনি স্কেলার রাশিও বিনিময় সূত্র মেনে চলে। মনে করি , এবং তিনটি ভেক্টর রাশি [চিত্র ১:২০ ]। এদেরকে যথাক্রমে , এবং রেখা দ্বারা সূচিত করা হয়েছে। এখন AC, BD এবং AD যোগ করি। অতএব ত্রিভুজের সূত্র হতে পাই, ABC ত্রিভুজে = + = + ACD ত্রিভুজে, = + =( + ) = আবার, BCD ত্রিভুজে, = + = + (9) এবং ABD ত্রিভুজে, = + = + ( + ) (10) সমীকরণ (9) এবং সমীকরণ (10) হতে পাই, (+) + = + (+ ) লব্ধির দিক নির্ণয় :
লব্ধির সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মান
(Maximum and minimum value of the resultant)
অতএব, দুটি ভেক্টর যখন একই সরলরেখা বরাবর পরস্পর একই দিকে ক্রিয়া করে তখন তাদের লব্ধির মান সর্বোচ্চ হবে এবং এই সর্বোচ্চ মান ভেক্টর রাশি দুটির যোগফলের সমান হবে।
লব্ধির সর্বনিম্ন মান,
১.৬ ভেক্টরের বিয়োগ
Subtraction of vectors
(ক) ত্রিভুজ সূত্রের সাহায্যে ভেক্টরের বিয়োগফল নির্ণয় :
(খ) সামান্তরিকের সূত্রের সাহায্যে ভেক্টরের বিয়োগফল নির্ণয় ঃ
১.৭ ভেক্টর যোগের কয়েকটি সূত্র
Some laws of vector addition
(ক) বিনিময় সূত্র (Commutative law) :
(খ) সংযোজন সূত্র (Associative law) : ( + )+ - +(+ )
আরও দেখুন...